বিজয় দিবস ২০২৪ উপলক্ষে পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য
সম্মানিত সভাপতি, প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ, উপস্থিত অতিথিবৃন্দ এবং আমার প্রিয় ভাই-বোনেরা,
আসসালামু আলাইকুম ও শুভ সকাল,
আজ ১৬ ডিসেম্বর—বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের অবসান ঘটে এবং পৃথিবীর বুকে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের। আজকের এই বিশেষ দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জিয়াউর রহমানকে যিনি (১৯ জানুয়ারি ১৯৩৬ – ৩০ মে ১৯৮১) ছিলেন বাংলাদেশের অষ্টম রাষ্ট্রপতি, প্রাক্তন সেনাপ্রধান এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী বাঙালি জনগণের উপর আক্রমণ করার পর তিনি তার পাকিস্তানি অধিনায়ককে বন্দি করে বিদ্রোহ করেন এবং সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যাঁর দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে একটি সফল পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিল।
সেইসব অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, শহীদদের এবং নির্যাতিত অসংখ্য মানুষের কথা, যাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি আমাদের স্বাধীনতার লাল সূর্য।
বিজয় দিবসের পটভূমিঃ
১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিল। ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে শুরু হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এর ধারাবাহিকতায় ধাপে ধাপে আমাদের জাতীয় চেতনা আরও গভীর হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে, কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আমাদের ন্যায্য অধিকার দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এর পরপরই ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে অনুপ্রাণিত করে।
২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাঙালির ওপর চালায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। এরপর ২৬ মার্চ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন, এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযোদ্ধারা ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। তাঁদের সঙ্গে ছিল দেশের সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-ছাত্রীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভারত সরকারের সহযোগিতায় এবং মিত্রবাহিনীর সমর্থনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রায় ৯৩,০০০ সদস্য আত্মসমর্পণ করে। এই দিনটি আমাদের জন্য বিজয়ের দিন, মুক্তির দিন, গৌরবের দিন।
বিজয়ের চেতনা ও আমাদের দায়িত্বঃ
আজ বিজয়ের এই মাহেন্দ্রক্ষণে আমাদের মনে রাখতে হবে, এই স্বাধীনতা কেবল ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়। এটি আমাদের স্বকীয়তা, আমাদের সংস্কৃতি এবং আমাদের আত্মপরিচয়ের প্রতীক। কিন্তু, স্বাধীনতার পর আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে এই অর্জনকে আরও অর্থবহ করার।
আমাদের সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দেশকে দারিদ্র্য, বৈষম্য এবং দুর্নীতি থেকে মুক্ত করা। আমরা একটি উন্নত, সুখী এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখছি, তা বাস্তবায়ন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, যদি আমরা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করি, তবে মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগের মূল্য আমরা রক্ষা করতে পারব না।
আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একসঙ্গে কাজ করি, তবে সেই দিন বেশি দূরে নয়, যেদিন বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর কাতারে দাঁড়াবে।
উপসংহারঃ
আজকের এই দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, মুক্তিযুদ্ধের সকল বীর যোদ্ধাকে, এবং সেইসব নিরপরাধ নারী-পুরুষ ও শিশুকে, যাঁরা শহীদ হয়েছিলেন এই যুদ্ধের সময়। আমরা তাঁদের প্রতি চিরকাল কৃতজ্ঞ।
আমাদের সবার উচিত বিজয়ের এই চেতনাকে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ধারণ করা। একতা, সহমর্মিতা এবং দেশপ্রেমই আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথ। আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের ব্যক্তিগত এবং জাতীয় জীবনে এমন কোনো কাজ করব না, যা আমাদের দেশকে ছোট করবে।
পরিশেষে, আমি সবাইকে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
ধন্যবাদ।